বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের কর্মবিরতি : নতুন করে সেশনজটের সম্ভাবনা

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন সময়ে নানান সমস্যায় ধুকলেও, বিভিন্ন অযাচিত সিদ্ধান্ত শিক্ষার্থীদের উপর চাপিয়ে দেওয়া হলেও এসব বিষয়ে কখনো সরব হন না শিক্ষকরা। সার্বজনীন যৌক্তিক দাবি-দাওয়ার ব্যাপারেও শিক্ষকদের প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ কোনো ধরনের সহযোগিতা থেকে সাধারণ শিক্ষার্থীরাও বারবার বঞ্চিত হয়েছে। তবে, সরকারের একটা সিদ্ধান্ত তাদের নিজেদের স্বার্থে সরাসরি আঘাত হানতেই কর্মবিরতির মতো পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছেন তারা।

শিক্ষকদের জন্য সম্প্রতি চালু হওয়া সার্বজনীন পেনশন স্কিম প্রত্যয় বাতিলের দাবিতে কর্মবিরতিতে যাচ্ছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা, একাত্মতা পোষণ করে কর্মসূচি গ্রহণ করেছে অপরাপর ৩৫টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়।

অর্থমন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনকে ষড়যন্ত্রমূলক এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্তশাসনের ওপর হস্তক্ষেপ তুলনা করে আগামী ৩০ জুন পূর্ণ কর্মবিরতি আর এই সময়ের মধ্যে দাবি না মানা হলে ১ জুলাই থেকে সর্বাত্মক কর্মসূচির ঘোষণা দেন শিক্ষক নেতারা। এই সময় ক্লাস, পরীক্ষা, দাপ্তরিক কাজসহ সবকিছু বন্ধ থাকবে বলে শিক্ষক ফেডারেশনের এক বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।

উল্লেখ্য যে, গত ১৩ মার্চ সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয়ের একটি প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়, যে সকল শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী ১ জুলাই তারিখের পর যোগদান করবেন তাদের জন্য সার্বজনীন পেনশন স্কিমের 'প্রত্যয় স্কিম' বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। তাদের ক্ষেত্রে উক্ত প্রতিষ্ঠান বা সংস্থার জন্য বিদ্যমান অবসর সুবিধা সংক্রান্ত বিধিবিধান প্রযোজ্য হবে না বলে জানানো হয় প্রজ্ঞাপনে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সাধারণ শিক্ষার্থী হিসেবে আমি উদ্বিগ্ন যে, এই কর্মসূচির কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যহত হবে, ক্লাস-পরীক্ষা-দাপ্তরিক কাজসহ সবকিছু বন্ধ থাকলে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শ্রেণি কার্যক্রম শেষ করতে শিক্ষক-শিক্ষার্থী উভয়ের কষ্ট হবে, আলাদা চাপ নিতে হবে, পরীক্ষা গ্রহণ-ফলাফল প্রকাশ বিলম্বিত হবে, এমনকি সেশনজটের মত সমস্যা প্রকট হওয়ার আশঙ্কাও তৈরি হতে পারে।

আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেগুলার স্টুডেন্টরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবো। এমনিতেই করোনা মহামারীর কারণে আমরা প্রায় ১.৫ বছর পিছিয়ে পড়েছি। আমাদের ডিপার্টমেন্টর স্নাতক ক্লাস ক্লাস শুরু হয়েছিলো ২০১৯ এর ফেব্রুয়ারিতে। সেই হিসাবে আমাদের স্নাতক শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২২ অথচ সেটা শেষ হয়েছে ২০২৩ এর শেষেরদিকে। এখন যদি আবার শিক্ষকদের এই  আন্দোলন চলমান থাকে তাহলে আমরা আবার সেশন জটে পড়ে যাবো।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থী হিসেবে শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ অক্ষুণ্ণ রেখেই আলোচনার মাধ্যমে এই জাতীয় সমস্যার সমাধান আমরা প্রত্যাশা করি। সরকারের কাছে শিক্ষক শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবিদাওয়ার ব্যপারে সুদৃষ্টির দাবি জানাই। একইসাথে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ অক্ষুণ্ণ রাখতে, শিক্ষার মানোন্নয়নে, সুখী, সমৃদ্ধ, উন্নত ও স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে শিক্ষক, শিক্ষার্থী সকলের সহযোগিতাপূর্ণ মানসিকতাও কামনা করি।